Friday, October 3, 2014

হেয়ার স্টাইল এর পরম্পরা

আমি তখন ক্লাস সিক্স কি সেভেন এ পড়ি। মুখে সবে একটু গোঁফের বলিরেখা পড়েছে। পাড়ায়, টিউসান ক্লাসে দু এক জনকে ভালোলাগা শুরু হয়েছে। তো স্বভাবতই মানজা মারার একটু চান্স পেলেই, জাস্ট ট্রাই করে দেখা। কখনো চুলের মাঝখানে সিঁথি, কখনো বা আবার ডানদিক দিয়ে, কখনো আবার স্নানের পরে ভেজা চুলে ব্যাকব্রাশ - কিন্তু সারাদিন যে কম্বিনেসানই বিরজমান থাকুকনা কেন, সন্ধে বেলায় বাবা বাড়ি ফেরার আগে একদম তেলাপাটি চুল আঁচড়ে নিপাট সুবোধ বালক।

কিছুদিন পরে বাবার ধানবাদ এ ট্রান্সফার হয়ে গেল। পড়াশোনার জন্য আমরা দুই ভাইবোন মায়ের সাথে বারাসাত এর বাড়িতেই থেকে গেলাম। নেক্সট পুজোর ছুটিতে ধানবাদে যাওয়া, ওখানেই সবাই মিলে একটা মাস কাটানোর প্ল্যান। সেখানে আমাদের কোয়ার্টার এর কাছেই একটা বিশালাকার মোষের খাটাল ছিল। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হাল্কা ঠাণ্ডার আবেশ গায়ে মেখে দুই ভাইবোন বাবার সাথে সেখানে হেটে যাওয়া, লাইনে দাঁড়িয়ে মোষের ঘন তাজা দুধ নেয়া আর ফেরার পথে গরমা গরম জিলিবি নিয়ে ঘরে ফেরা - এ ছিল মোটামুটি আমাদের প্রতিদিনের রুটিন। তো একদিন সকালে খাটাল যাবো বলে বাবা আর বোন অলরেডি প্রস্তুত। উইপোকার যেমন কাল ঘনিয়ে আসলে পাখনা গজায়, আমারো তেমনি সেদিনই একটু মানজা মারার ইচ্ছা হল। ভাবলাম অনেকদিন চুলটা নিয়ে নাড়াচড়া করা হয়নি, একটু ডানদিক দিয়ে সিঁথি করে দেখি, সকালের তাড়াহুড়োয় বাবা খেয়াল করবে না। কিন্তু সেদিন শুধু উইপোকা যথেষ্ট ছিল না, সাথে মিস্টার মারফি ও যোগ দিলেন, "এনিথিং দ্যাট ক্যান গো রং, উইল গো রং"। চুলটাকে আর কোনমতে সেট করতে পারি না, একটু তেল, একটু জল হেন তেন করতে করতে মিনিট দশেক যে অলরেডি অতিবাহিত, খেয়াল ই করিনি। হটাৎ পিছন থেকে একটা শুধু দৈববাণী কানে এলো "পলি(বোনের ডাকনাম)! ভাইয়াকে বলে দিও সেলুনে গিয়ে চুলটা কেটে আসে যেন". তার পরে মনে হয় চুলে নেক্সট মানজা ট্রাই করেছিলাম চাকরি পাওয়ার পরে।

এই ঘটনটা আমি কোনদিন ই ভুলবোনা, কিন্তু নতুন করে আবার মনে পড়ল দিন দুই আগে। ছেলেকে স্নান করিয়ে, জামা কাপড় পরিয়ে দিয়েছি, চুলটা আঁচড়ে দিতে ভুলে গেছিলাম, লাঞ্চ করে অতঃপর ঘুম। বিকালে উঠে সে দেখে অনেকক্ষণের না আঁচড়ানো চুল মাথার মাঝখানে একটু ঢেউ খেলে আছে, আয়নায় প্রথম খেয়াল করে বল্ল "আব্বু, দেখ আমাকে একদম দিব্য আঙ্কল(আমার ফুটবল গ্রুপ র একজন) এর মত লাগছে"। আর তার আম্মু আবার আরেকধাপ এগিয়ে বললেন "হ্যাঁ বাবু, একটা খুব ভাল ফুটবলার আছে, রোনালদো - তোমাকে একদম তার মত দেখাচ্ছে"। ব্যাস, তার পর থেকে সকাল সন্ধে ছেলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত দিয়ে তার তৈলাক্ত কেশরাশি কে রোনালদো ওয়েভ বানানর অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছে আর আমি নির্বাক!!

No comments:

Post a Comment

Hi:-)
Thanks for dropping by. Please leave your mark, it keeps me going :-)

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...